ইমাম বুখারী স্বীয় শিক্ষক ইসহাক বিন রাহওয়াইহ থেকে এই গ্রন্থ রচনার প্রেরণা লাভ করেন।একদিন ইসহাক একটি এমন গ্রন্থের আশা প্রকাশ করেন,যাতে লিপিবদ্ধ থাকবে শুধু সহিহ হাদীস। ছাত্রদের মাঝে ইমাম বুখারী তখন এই কঠিন কাজে অগ্রসর হন।২১৭ হিজরী সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি মক্কার হারাম শরীফে এই গ্রন্থের সংকলন শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৩ হিজরী সনে এর সংকলনের কাজ সমাপ্ত হয়। বুখারী শরীফের সংকলনকালে তিনি সর্বদা রোজা রাখতেন এবং প্রতিটি হাদীস গ্রন্থ সন্নিবেশিত করার আগে গোসল করে দু' রাকাত নফল নামাজ আদায় করে মুরাকাবা ও ধ্যানের মাধ্যমে হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন।[১১] এই গ্রন্থে তিনি সকল সহিহ হাদীস সংকলন করেননি। বরং সহিহ হাদীসের মাঝে যেগুলো তার নির্ধারিত শর্তে উন্নীত হয়েছে,সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি স্বয়ং বলেন, "আমি জা'মে কিতাবে সহিহ হাদিস ব্যতিত অন্যকোন হাদিস ওল্লেখ করিনি। তবে কলেবর বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক সহিহ হাদিসকে বাদ দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি আমার কিতাবে প্রতিটি হাদিস লেখার পূর্বেই গোসল করেছি এবং দু রাকাআত নামাজ আদায় করে নিয়েছি। অপর বর্ণনা হতে জানা যায় যে, ইমাম বুখারী তার স্বীয় কিতাবের শিরোনাম সমূহ রাসুলে করিম এর রওজা এবং মসজিদে নববির মধ্যস্থলে বসে লিখেছিলেন। প্রত্যেক শিরোনামের জন্য দুরাকায়াত নফল নামাজ আদায় করতেন এবং মুরাকাবা করতেন । ইমাম বুখারীর প্রায় ৬ লাখ হাদীস মুখস্থ ছিল। বুখারী শরীফের পুরো নাম হলোঃ আল-জামি আল-সাহীহ আল-মুসনাদ মিন উমুরি রাসূলিল্লাহ ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি। বুখারি শরীফ প্রণয়ের স্থানঃ আবুল ফজল মোহাম্মদ বিন তাহেরের বর্ণনা মতে, ইমাম বুখারী তার গ্রন্থখানি বুখারাতে বসে রচনার কাজ শেষ করেছেন। আবার কারো মতে মক্কা মুয়াজ্জামায় আবার কারো মতে বসরাতে। তবে ওল্লেখিত সকল বর্ণনা নির্ভুল। কেননা তিনি ওল্লেখিত সকল নগরীতে অবস্থান করেছেন। স্বয়ং ইমাম বুখারী বলেছেন, আমি আমার সহিহ বুখারি সঙ্গে নিয়ে বসরা শহরে ৫ বছর অবস্থান করেছি এবং আমার কিতাব প্রণয়ের কাজ শেষ করি। আর প্রতি বছরই হজ্ব পালন করি এবং মক্কা হতে বসরাতে ফিরে আসি।তিনি ৬ লাখ হাদিস হতে যাচাই বাছাই করে সর্বসাকুলে ১৬ বছর নিরলস সাধনা করে এ প্রসিধ্য গ্রন্থখানি প্রণয়ন করেন।
সুন্নি মুসলিমরা ইসলাম অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্প্রদায়। সুন্নিরা আরো পরিচিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'য়াত (আরবি: اهل السنة والجماعة ") সংক্ষেপে আহল আস-সুন্নাহ (আরবি: أهل السنة) নামে। সুন্নি শব্দের উৎপত্তি সুন্নাহ (আরবি: سنة) শব্দ থেকে যা দ্বারা ইসলামের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ও কর্মকে বুঝায়। নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবিত অবস্থায় সুন্নি বা শিয়া বা অন্য কোনো নামে কোনো সম্প্রদায় ছিল না। সুন্নিরা ইসলামের সেই অংশের প্রতিনিধিত্ব করে যারা নবি মুহাম্মদের মৃত্যুর পর সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত খলিফা আবু বকরকে মেনে নিয়েছিল। তাই প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় ( খিলাফত) নির্বাচন বা ‘শুরা’ সুন্নি ইসলামের একটা বড় বৈশিষ্ট্য। অধিকাংশ সুন্নি আইনজ্ঞরা নিজেদের সুন্নি আইনের চারটি ঘরানার (হানাফি, মালিকি, শাফিয়ি, হাম্বলি) যে কোনো একটির অনুসরণ করেন। এর বাইরেও কয়েকটি সংখ্যালঘু সুন্নি মাযহাব রয়েছে।
সলিম জনসংখ্যার কত অংশ কোন প্রধান ধারার সাথে যুক্ত আছে তা নির্ণয় করা পরিসংখ্যানবিদদের কাছে বেশ কষ্টকর ছিল। যেমন, শিয়া সুন্নি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য অনেক দেশেই পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। যখন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না তখন দেশটিকে সুন্নি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবুও বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে একজন মোটামুটি এই অনুমানে পৌঁছাতে পারে যে শিয়ারা মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১০-১৫%। যদিও আরেকটি গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখা গেছে শিয়াদের মোট পরিমাণ ৭.৫%।[১] প্রকৃতপক্ষে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্যমতে শিয়াদের পরিমাণ মোট মুসলিম জনসংখ্যার এক-দশমাংশেরও কম।